শিল্প ও বাণিজ্য
ভুমিকা
সিরাজগঞ্জ জেলার অধিকাংশ লোক কৃষির উপর নির্ভরশীল। কৃষির উপর নির্ভরশীল হলেও এ জেলা শিল্পায়নের ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। বিশেষ করে তাঁত সমৃদ্ধ এলাকা হিসেবে এ জেলা প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। তাঁত শিল্পের আওতায় বিভিন্ন ধরণের হ্যান্ডলুম ও পাওয়ারলুম শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এ ছাড়াও এ জেলায় আরও নতুন নতুন শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। তবে সিরাজগঞ্জ জেলায় শিল্পায়নের ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা রয়েছে। (১) যমুনা নদীর ভাঙ্গন। নদীর করাল গ্রাসে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তাই নদীতে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে নদী ভাঙ্গন রোধ করতে পারলে নদীর করাল গ্রাস থেকে বহু শিল্প প্রতিষ্ঠান রক্ষা পাবে। ফলে আরও নতুন শিল্প স্থাপিত হবে। (২) ঘনঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছে। ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট কমাতে পারলে শিল্প সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত সৃষ্টি হবে। (৩) সিরাজগঞ্জ জেলায় যে সকল সরকারী ও বেসরকারী ব্যাংক আছে তারা সহজ শর্তে শিল্প খাতে ঋণ দিতে চান না। ঋণ দিলেও সুদের হার বেশী। তাই এ জেলায় পর্যাপ্ত ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে এবং সুদের হার কমাতে হবে। (৪) শিল্প ক্ষেত্রে নতুন কোন গ্যাস সংযোগ দেয়া হচ্ছে না। ফলে গ্যাস ভিত্তিক শিল্প স্থাপনে নতুন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তাই শিল্পক্ষেত্রে গ্যাস সংযোগ অব্যাহত রাখতে হবে। সম্ভাবনা ‘বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু’ চালু হওয়ায় পূর্ব পশ্চিমাঞ্চলের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের মাধ্যমে এই জেলায় বিদ্যুত, গ্যাস প্রাপ্তি সহ সড়ক ও নৌ পথে পরিবহন ব্যবস্থায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। ফলে এ জেলায় শিল্পন্নয়নের এক নতুন দিগন্ত সৃষ্টি হয়েছে। একই সালে সরকারের উদার শিল্পনীতি, বেসরকারী উদ্যোগের প্রতি দৃঢ় সমর্থন, সর্বাত্মক ভূমিকা থাকায় সিরাজগঞ্জ জেলায় শিল্পায়ন প্রক্রিয়ায় এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সাধন অব্যাহত রয়েছে। বহু নতুন নতুন উদ্যোক্তা এ জেলায় শিল্প স্থাপনে এগিয়ে আসছে। এ সকল উদ্যোক্তাদের অবকাঠামো সুবিধা দেয়া গেলে আরও অনেক শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। শিল্পনগরী সম্প্রসারণ শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মোতাবেক সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্প নগরী সম্প্রসারণের জন্য ১২.৬৬ একর জমির অধিগ্রহণের প্রস্তাব করা হয়। প্রস্তাবটি একনেক সভায় অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানা যায়। শিল্প নগরীতে বরাদ্দযোগ্য জমি না থাকায় নতুন উদ্যোগের প্লট বরাদ্দ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে বিসিকের হাতে ১০/১২ টি প্রস্তাব রয়েছে। এই মুহুর্তে প্লট বরাদ্দ প্রদান করা হলে উক্ত শিল্প ইউনিটগুলি বাস্তবায়ন করা সম্ভব এবং আরও অনেক উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা সম্ভব হবে কাজেই শিল্প ক্ষেত্রে সম্প্রসারণ কাজটি সম্পন্ন করা জরুরী।
শিল্প পার্ক প্রকল্প বাস্তবায়ন
বঙ্গবন্ধু সেতুর ২.৫০ কিলোমিটার পশ্চিমে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলায় ৪০০.০০ একর জমির উপর ২০০.০০ কোটি টাকা প্রকল্প ব্যয়ে শিল্প পার্ক স্থাপনের জন্য ১লা ডিসেম্বর/৯৯ তারিখে একনেক কর্তৃক অনুমোদন করা হয়। পরবর্তীতে ২৩ জানুয়ারী/০১ জমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম সহ উন্নয়নমূলক কাজের উদ্বোধন করা হয়। প্রকল্পের সাইট অফিস নির্মাণ, আসবাবপত্র, অফিস সরঞ্জামাদি, যানবাহন ক্রয়সহ লোকবল নিয়োগ করা হয়। পরবর্তীতে জুন/০৪তারিখে প্রকল্প মেয়াদ শেষ হওয়ায় তা বর্ধিত না করায় প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। শিল্প পার্ক প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারে ৫৬০ টি শিল্প স্থাপন এবং ১ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান হবে। সিরাজগঞ্জ তথা দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বৃদ্ধি পাবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রকল্পটি পুনরায় চালু করার জন্য বিসিক প্রধান কার্যালয় কর্তৃক ডিপিপি প্রণয়ন করে মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা হয়েছে বলে জানা যায়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য আগামী অর্থ বৎসরে বাজেট বরাদ্দ পাওয়া যাবে বলে জানা গেছে।
রাজধানী ও বিভাগীয় শহরের মত শিল্পায়ন না হলেও ইদানিং যমুনা সেতুর বদৌলতে সদর উপজেলার শিয়ালকোল ও কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নে রড, সিমেন্ট, টেক্সটাইলসহ অনেক ছোট ও মাঝারী আকারের শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। শাহজাদপুরের উল্লেখযোগ্য শিল্প কারখানাগুলো হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, ফ্লাওয়ার মিল, মিল্ক ভিটা, রাইস মিল, তৈলমিল, টৈক্সটাইল মিল, ডাইং কারখানা, বরফকল, ওয়েল্ডিং ও হিমাগার। কামারখন্দে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহের সুবিধার কারণে ভদ্রঘাট ইউনিয়নের ২/৪ টি মাঝারী শিল্প কারখানা গড়ে উঠলেও গ্যাস ও বিদ্যুতের অভাবে উপজেলা সদরসহ অন্যান্য ইউনিয়নে কোন শিল্পায়ন হয়নি। গ্যাস ও বিদ্যুত সুবিধা প্রদান করলে মাঝারী ও ক্ষুদ্র শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা এ উপজেলায় রয়েছে। উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতুর অতি সন্নিকটে তাঁত শিল্প সমৃদ্ধ বেলকুচি উপজেলায় গ্যাস লাইন/গ্যাস সরবরাহ না থাকায় তাঁত শিল্প সমৃদ্ধির জন্য তাঁত বস্ত্র ক্যালেন্ডারিং মিল, মার্চরাইজিং মিল, কটন মিল জাতীয় শিল্প কারখানা স্থাপনের মত যথেষ্ট সম্ভাবনা ও উদ্যোগী ব্যক্তি থাকা সত্ত্বেও এ সকল শিল্প কলকারখানা এ এলাকায় প্রতিষ্ঠা লাভে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। কাজেই উল্লেখিত শিল্প কারখানা স্থাপনের ক্ষেত্রে অতি জরুরী ভিত্তিতে বেলকুচি উপজেলাতে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বেলকুচিতে গ্যাস সম্প্রসারিত হলে এ এলাকায় গড়ে উঠবে তাঁতের সাথে সম্পর্কিত বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং সে সাথে হাজার হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
শিল্প সংক্রান্ততথ্য
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
সিল্ক | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
তুঁত গাছের চাষ এবং তুঁত পাতার দ্বারা পলু পালনের মাধ্যমে রেশম গুটি উৎপাদনকে রেশম চাষ বলা হয়। এটা সম্পূর্ণ ভাবে কৃষি ভিত্তিক একটি অর্থকরী ফসল। অপরদিকে রিলিং এর মাধ্যমে রেশম সুতা (Silk) আহরণ, কৃষি ভিত্তিক শিল্পের পর্যায়ভুক্ত। গ্রামীণ লোকদের সার্বক্ষণিক কর্মসংস্থান, দারিদ্র বিমোচন এবং আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশে গুণগত মানের রেশম উৎপাদন বৃদ্ধিই ছিল রেশম বোর্ডের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। দেশীও উপকরণ ও প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উন্নত মানের তুঁত জাত, রেশম কীট এর ডিম উৎপাদন ও সরবরাহ, গ্রামীণ চাষীদের উদ্বুদ্ধকরণ এবং প্রশিক্ষণ প্রদানের কর্মসূচী বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা রেশম বোর্ড ১৯৭৯ সাল থেকে করে আসছে। তবে সিরাজগঞ্জ জেলার জেলা সদরে রেশম সম্প্রসারণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপকের কার্যালয় এবং এর অধীনে জেলার বিভিন্ন জায়গায় ৮টি উপকেন্দ্র বা ‘রেশম সম্প্রসারণ পরিদর্শকের কার্যালয়’ আছে। এছাড়াও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বাগবাটিতে রেশম বোর্ডের নিজস্ব জায়গায় রেশম সুতা উৎপাদনের জন্যে একটি ‘মিনি ফিলেচার’ আছে। উক্ত ৮টি রেশম সম্প্রসারণ পরিদশর্কের কার্যালয়ের মাধ্যমে সিরাজগঞ্জ জেলার রেশম চাষ সম্প্রসারণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। আগ্রহী রেশম চাষীদের মাঝে ৫০ পয়সা মূল্যে তুঁত চারা বিতরণ, রোপন পূর্বক, রোপন কালীণ ও রোপন পরবর্তী পরিচর্যার পরামর্শ, রেশম গুটি উৎপাদনের সাথে জড়িতদের রেশম পলু পালনকালীণ সময়ে বাড়ী বাড়ী যেয়ে সপ্তাহে ১/২ দিন কারিগরি পরামর্শ প্রদান, উন্নত মানের রেশম গুটি উৎপাদনের জন্যে প্রশিক্ষণ প্রদানসহ রেশম গুটি বাজারজাতকরণের সমস্ত ব্যবস্থা মাঠ পর্যায়ের মাঠকর্মীগণ করে থাকেন।
২০০৮-০৯ অর্থ বছরে যে সকল রেশম চাষী তুঁত গাছ রোপন করেছেন- জীবিত থাকা সাপেক্ষে সে সকল রেশম চাষীকে তুঁত গাছে খুঁটি লাগানোর জন্য গাছ প্রতি ৪( চার) টাকা ইনসেনটিভ প্রদানের জন্যে রেশমবোর্ড কার্যক্রম গ্রহণ করেছে যা ২০০৯-১০ অর্থ বছরে তুঁত চারা রোপনে রেশম চাষীকে উৎসাহিত করবে। নিম্নে সিরাজগঞ্জ জেলার রেশম চাষ কর্মকান্ডের কিছু তথ্য দেয়া হলোঃ | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯৯০ পূর্ববর্তী সময় পর্যন্ত সিরাজগঞ্জ জেলার রেশম চাষ কার্যক্রমভুক্ত এলাকাগুলোতে রেশম চাষ বেশ প্রসার লাভ করে। কিন্তু ১৯৯০ পরবর্তীতে বাজার অর্থনীতি চালুর ফলে বিদেশী কাঁচা রেশম সুতা আমদানি হওয়ায় দেশীয় উৎপাদিত রেশম গুটির দাম পড়ে যায় এবং রেশম চাষীরা রেশম চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। পরবর্তীতে যখন রেশম গুটির দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেতে থাকে তখনি ১৯৯৮ সালে প্রথম, ২০০৪ সালে দ্বিতীয় বার এবং ২০০৭ সালে তৃতীয় বার প্রলয়ংকরী বন্যার ফলে রেশম চাষীদের তুঁত গাছ ব্যাপকভাবে মারা যায় এবং রেশম চাষের জন্য পলু ঘর ও পলু পালন সরঞ্জামাদি সম্পন্ন ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বাংলাদেশ রেশম বোর্ড ১৯৯৮ বন্যা পরবর্তীতে ঋণ সহায়তা দিলেও পরবর্তী বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ রেশম চাষীদের জন্যে কোন পূনর্বাসন কর্মসূচী গ্রহণ করে নাই। অত্র এলাকার মাটি রেশম চাষের উপযোগী হলেও ঘন ঘন বন্যায় রেশম চাষের অগ্রগতি দারুণভাবে ব্যাহত করে। ব্যক্তি পর্যায়ে যে সকল রেশম চাষী তুঁত গাছ লাগায় তা মূলতঃ নিচু জায়গায় ফলে বন্যায় দারুনভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে সড়ক ও জনপথ/ এলজিইডি/ পানি উন্নয়ন বোর্ড-এর রাস্তা/ বাঁধে তুঁত গাছ লাগানোর বিকল্প নেই। রেশম চাষ একটি শ্রমঘন কৃষি কাজ। পরিবারের ছেলেমেয়ে সহ মহিলাদের অলস শ্রম কাজে লাগানো যায়। বছরে ৪/৫ বার এই চাষ করা যায়। একবার তুঁত গাছ লাগালে তা থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত ভাল পাতা পাওয়া যায়। ১০০টি ভাল তুঁত গাছ দ্বারা একজন চাষী বছরে ১৬,০০০ থেকে ২৪০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারে। গরীব ও প্রাস্তিক চাষীদের পরিবারের বাড়তি আয়ের জন্য এ চাষ অত্যন্ত গ্রামের মানুষকে শহর মুখী না করে আয়ের পথ সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে এ চাষের ভূমিকা অতুলনীয়। প্রধান কিংবা অপ্রধান আয়ের উৎস হিসেবে রেশম চাষ দারিদ্র বিমোচনে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে। রেশম বাংলাদেশের অতীত ঐতিহ্য। রেশম চাষে ভূমিকা রেখে সিরাজগঞ্জ জেলাও হতে পারে অতীত ঐতিহ্যের গর্বিত অংশীদার।
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
তাঁত শিল্প | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জেলার তাঁতের উপর কিছু পরিসংখ্যানগত তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
সিরাজগঞ্জ জেলার উপজেলাওয়ারী তাঁত ও তাঁতী সংখ্যা
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
দেশের অন্যান্য জেলার মতো সিরাজগঞ্জ জেলার তাঁত শিল্পে নিয়োজিত অধিকাংশ লোক পল্লী এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাস করে। তাদের উৎপাদিত পণ্য বিপণনের প্রচলিত ব্যবস্থা এখনও অত্যন্ত অসংগঠিত। জেলার কয়েকটি হাটে তাঁতীদের উৎপাদিত বস্ত্র বিক্রি হয়ে থাকে যার মধ্যে সোহাগপুর হাট, শাহাপুর হাট, এনায়েতপুর হাট ও সিরাজগঞ্জ নিউমার্কেট হাট উল্লেখযোগ্য । বিদ্যমান বিপণন ব্যবস্থায় মধ্যস্বত্ত্বভোগী মহাজন, পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা তাঁতীদের নিকট থেকে বস্ত্র ক্রয় করে। এ পরিপ্রেক্ষিতে তাঁত বস্ত্র বিপণনের প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো গড়ে তোলার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা দরকার। তাঁতীরাও প্রত্যাশা করে তাদের উৎপাদিত তাঁত বস্ত্র বিক্রয় ও রপ্তানির মাধ্যমে তাদের ভাগ্যের উন্নয়নসহ দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সাধিত হবে। কিন্তু অবেহলিত তাঁতীদের সেই আশা অপূর্ণ থেকে যায়। ক্রমাগত সুতার মূল্য বৃদ্ধি, রং ও রাসায়নিক দ্রব্যাদির দাম বৃদ্ধি এবং তাদের উৎপাদিত বস্ত্র সুষ্ঠু বাজারজাতকরণের সমস্যার কারণে তাঁতীরা তাদের পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। তারা ক্রমান্বয়ে হয়ে পড়েছে বিপর্যস্ত। ফলে আর্থিক মেরুদন্ড ভেঙ্গে পড়েছে। তাই অনেকে তাদের পেশা বদল করতে বাধ্য হচ্ছে। সিরাজগঞ্জ পৌরসভার আওতাধীন অনেক এলাকারই অনেক তাঁতী এখন অন্য পেশায় যেতে বাধ্য হচ্ছে। জাতীয় অর্থনীতিতে তাঁত শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা সত্ত্বেও এ শিল্পের সমস্যা অনেক। তাঁতীদের সুষ্ঠু সংগঠনের অভাব, মূলধনের অভাব, ন্যায্য মূল্যে মানসম্পন্ন উৎপাদন উপকরণ সহজলভ্য না হওয়া, প্রযুক্তিগত অনগ্রসরতা, প্রশিক্ষণ ও দক্ষতার অভাব, উৎপাদিত বস্ত্রের সুষ্ঠু বিপণনের অভাব প্রভৃতি তাঁত শিল্পের উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে আছে।সিরাজগঞ্জ জেলার তাঁত শিল্পের সার্বিক উন্নয়ন ও তাঁতীদের কল্যাণার্থে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের তিনটি বেসিক সেন্টার এ জেলায় রয়েছে। সিরাজগঞ্জ সদর, বেলকুচি, কামারখন্দ, কাজিপুর ও তাড়াশ উপজেলা নিয়ে বেসিক সেন্টার সিরাজগঞ্জ, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলা নিয়ে বেসিক সেন্টার শাহজাদপুর এবং উল্লাপাড়া ও রায়গঞ্জ উপজেলা নিয়ে বেসিক সেন্টার উল্লাপাড়া কাজ করে যাচ্ছে। উল্লেখিত ৩টি বেসিক সেন্টার হতে তাঁতীদের জন্য ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচী প্রকল্পের আওতায় ৩,৮৫০ জন তাঁতীর মধ্যে ৬ কোটি ৬৪ লক্ষ টাকা ঋণ প্রদান করা হয়েছে। উক্ত ঋণ কার্যক্রম ১৯৯৯ সালে শুরু হয়ে অদ্যাবধি চলমান রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন কাস্টমস হাউসে রক্ষিত সুতা স্বল্প মূল্যে বিভিন্ন তাঁতী সমিতিতে বরাদ্দ দেয়া হয়। তাঁতীদের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নের জন্য নরসিংদী তাঁত প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ও পাবনা জেলার বেড়াতে তাঁত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড উক্ত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসমূহে তাঁতীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। এছাড়া পাবনা জেলার ঈশ্বরদীতে বেনারসী পল্লী স্থাপন করা হয়েছে যেখানে সিরাজগঞ্জ জেলার অনেক তাঁতী রয়েছে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগ বিশেষ করে বন্যার সময় বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড তিনটি বেসিক সেন্টারের মাধ্যমে উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় সিরাজগঞ্জ জেলার তাঁতীদের আর্থিক অনুদান দিয়ে দূর্যোগকালীণ সময়ে সহায়তা করে থাকে। এছাড়া বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড বিভিন্ন তাঁতী সমিতি গঠনের মাধ্যমে তাঁতীদের সুসংগঠিত করে থাকে। | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
তাঁতীদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের উপায় | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
তাঁতীদের উৎপাদিত বস্ত্র বিপণনের সমস্যা সমাধানের সম্ভাব্য উপায়সমূহ নিম্নরূপ | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
এই গুরুত্বপূর্ণ খাতে যে পেশার লোকজন নিয়োজিত আছে তাদের কল্যাণার্থে সরকারসহ সকলের এগিয়ে আসা উচিত। বদলে যাওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে আমাদের আর একবার শপথ করতে হবে যে, দেশীয় তাঁত বস্ত্র ব্যবহার করে তাঁত শিল্প রক্ষায় অবদান রাখব। এ শিল্প রক্ষা পেলে একদিকে যেমন বস্ত্রের চাহিদা মিটিয়ে আমদানী হ্রাসের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করবে অন্যদিকে বিদেশে রপ্তানীর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই যে কোন মূল্যে এই অতীব গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকে রক্ষা করে একে আরও আধুনিক ও সময়োপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মিল্কভিটা | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বাঘাবাড়ি নদী বন্দর | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
|
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস